on

তিনটে মাঠ পেরিয়ে মুখার্জিদের ডোবা। ডোবার পাশের মাটির রাস্তায় আমরা গুলি খেলতাম। বাবার ইয়াব্বড় সাইকেলে হ্যাফ প্যাডেল করে দূরদূর থেকে সেখানে জড়ো হতাম। একটা ছোট ঘাট মত আছে ওখানে। সেখানে যাওয়া বারণ। ও পাড়ার ঠান দিদা পা পিছলে ওখানেই মারা গিয়েছিলেন। ছেলে পিলে সৎকারে আসে নি। সবাই বলে ওখানে ভূত আছে। ঠান দিদার। আমার ভারী মজা লাগে। সে বুঝি গল্প শোনাবে ব্রহ্মদৈত্যের। সরকার থেকে একটা দায়সারা বিপজ্জনক বোর্ড লাগিয়ে দিয়ে গেছে বহুদিন। সে বোর্ডের বয়স এখন বোধহয় ঠান দিদার কাছাকাছি।

সতর্কতা এড়িয়েই আমরা খেলতাম। গড়িয়ে গড়িয়ে আমাদের রঙিন গুলিগুলো ডুপ শব্দে ডোবায় পড়ে অনির্দিষ্ট গন্তব্যে হারিয়ে গেছে কতবার। সেখানে কচুরিপানা। সেখানে ধুলো ধুলো গ্রাম। টালির বাঁকা বাড়িটা ছিল শবরীর বাসা। ওদের বাড়ি থেকে শুকনোলঙ্কা পোড়ার গন্ধ পেতাম। অসময়ে শুকনোলঙ্কা। ভাত দিয়ে খেলে অম্বল হয়। খিদে পায় না।

শবরীদের অনেক খিদে ছিল। শবরীদের রেশন কার্ড ছিল না। প্রতিদিন বর্ষা হলে, শবরীর মা গুগলি নিয়ে বাজারের কোন অজ্ঞাত ছোট কোনায় বসত। আলোহীন। রিন্টুর জ্বর হলে ডাক্তার বহু সেবা যত্ন করত। সাম্রাজ্য সাম্রাজ্য ওষুধ। তীক্ষ্ণ ইনজকশন প্রয়োজনে। এদিকে শবরীর মা জ্বরে অহেতুক মরে গেলো। দেহ পোড়ানোর সে কী আয়োজন ! ওই বাড়িতে এতো মানুষ আগে আসেনি কেন, আমায় বোন প্রশ্ন করেছিল।

আমি জানলা দিয়ে দেখেছিলাম সেসব। তার পবিত্র গরাদ ভিজে যাচ্ছে হাওয়ায়। তার ফিনফিনে গা আর মুহূর্তকাল পরে ডুবে যাবে মেঘে। এই করাল দৃশ্যপট বন্ধ করে দিতে চাইছি আপ্রাণ। প্রতিটি বিদ্যুৎ ঝলকে জানলার বাইরের দৃশ্য পালটে যাচ্ছে। পালটে যাচ্ছে দেশ, জাত, রঙ, লিঙ্গ, অর্থনীতি, সমাজ, শ্রেণী, প্রকৃতি, দাসত্ব, কামড়… বুকের ভেতর সময়ের নিগূঢ় হাতুড়িপেটা।

মলিন স্বচ্ছ জানলার কপাট বন্ধ করতে লাগাতার বারণ করছে বোন।

Leave a comment